দীর্ঘ মেয়াদে রক্তক্ষয়ী দিনের সাক্ষী হলো গাজা
এক ভয়ানক রক্তক্ষয়ী দিনের সাক্ষী হলো ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা। চলমান ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার রাতে গাজার আল-আহলি আল-আরবি হাসপাতাল সহিংসতার শিকার হয়। এতে অন্তত ৫০০ ব্যক্তি নিহত হন। এ ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে।
ঘটনার পর গাজা-ভিত্তিক ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, হাসপাতালটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইসরায়েল। ঘটনার জন্য তারা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী আরেক সশস্ত্র সংগঠন প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদকে (পিআইজে) দায়ী করেছে।
ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ফিলিস্তিনের গাজার প্রতিরোধ সংগঠন হামাসের আকস্মিক ও নজিরবিহীন হামলার জবাবে ‘কঠিন প্রতিশোধ’ নেওয়ার হুমকি দিয়েছে দেশটি। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা উপত্যকাকে ‘জনমানবশূন্য দ্বীপে’ পরিণত করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
নেতানিয়াহুর এ হুঁশিয়ারির মধ্যেই সম্ভাব্য স্থল অভিযানের জন্য গাজা সীমান্তে বিপুল অস্ত্রশস্ত্র ও সৈন্য সমাবেশ শুরু করেছে ইসরায়েল। এতে গাজায় দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে গাজার বাসিন্দাদের আবারও এক ভয়ানক মানবিক সংকটের মুখে পড়ার।
গত শনিবার ইসরায়েলে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় হামলা চালান গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। মাত্র ২০ মিনিটে দেশটিতে ৫ হাজারের বেশি রকেট ছোড়ার কথা জানায় হামাস। এ হামলা ঘিরে দুই পক্ষের মধ্যে শুরু হওয়া লড়াইয়ে ইতিমধ্যে কয়েক শ ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। বেশ কয়েকজন ইসরায়েলি সেনাকে বন্দী করেছে হামাস। ৫০ বছর আগে ‘ইয়ম কিপ্পুর’ যুদ্ধের (১৯৭৩ সালে ৬ দিনের আরব–ইসরায়েল যুদ্ধ) পর এমন রক্তক্ষয়ী হামলার মুখে দ্বিতীয়বার পড়েনি ইসরায়েল।
ইসরায়েল বলছে, গোয়েন্দা তথ্যমতে, পিআইজের ছোড়া রকেট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে হাসপাতালটিতে আঘাত হেনেছে। এ ছাড়া হাসপাতালটিতে হামলায় প্রাণহানির যে সংখ্যার কথা বলা হচ্ছে, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছে ইসরায়েল।
পিআইজের মুখপাত্র দাউদ শেহাব বলেছেন, হামলার বিষয়ে ইসরায়েলের দাবি মিথ্যা, বানোয়াট। এসব কথা বলে দখলদার ইসরায়েল বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে যে ভয়ংকর অপরাধ, যে গণহত্যা চালাচ্ছে, তা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
হাসপাতালে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠক বাতিল করেছেন আরব নেতারা। ইসরায়েল সফর শেষে জর্ডানে যাওয়ার কথা ছিল বাইডেনের। সেখানে আরব নেতাদের সঙ্গে তাঁর বৈঠক করার কথা ছিল।
হাসপাতালে হামলার ঘটনাকে ‘বিস্ফোরণ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন বাইডেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, এ ঘটনায় তিনি ক্ষুব্ধ, গভীরভাবে মর্মাহত।